অতীতের তীর হতে প্রবাহ তার নিত্যদিনের
নতুনের পথে । সেই সময়ের পানে ফিরে তাকাই যখন
দেখি চেয়ে, পাঁচ বছর হয়ে গেল, অবুঝ বোনটি আমার;
তুই নেই এ মায়াকাননে । কত তাড়াতাড়ি চলে গেলি তুই
আমাদের একাকী ফেলে । হায়, কেন এমন হল ?
তোর আদর মাখা হাত আমার কপালে আর
দেয়না ছোয়া, মিস্টি হাসিতে ভরে না আমার ঘর ;
ভাইয়া, এই ভাইয়া ওঠ না । মধুর প্রশ্রয়ে
আমার আলস্য আনন্দে, তোর জল ঢেলে দেয়া;
খুবে বেশি অনুভব করি এখন । মমতার ছোয়া
এখন খুঁজে যে পাইনা কোথাও! মনে পড়ে তোর
আমি যখন ধমকে দিতাম তোকে, তুই হাসতি শুধু ।
মনে পড়ে, ছোটবেলায় কোন বিয়ের ছবি দেখলে
তুই বলতি, এইরকম লাল টুকটুকে বেনারসি পড়ে
আমি যাব শ্বশুর বাড়ি । আলতা রাঙা পায়ে
বাজবে রূপোর মল রিনিক ঝিনিক । আমি কপট রাগে বলতাম,
আমায় ফেলে চলে যাবি তুই ?? তোর কাদকাদ চোখে তখন
অশ্রুর আনাগোনা । হেসে বলতাম- পাগলি মেয়ে কোথাকার ;
আমি তো মজা করলাম । তখন তুই বলতি,
“না ভাইয়া দেখিস, তোকে ফেলে আমি কোথ্থাও যাব না ।
সঙ্গে করে নিয়ে যাবো তোকে, তুই দেখিস”।
মাঝে মাঝে ভাবতাম, আমি তোর ছোট না তুই আমার !
এমন ভাবে গুছিয়ে রাখতিস আমায়;
ঘরদোর থেকে শুরু করে বোহেমিয়ান এই আমাকে-
তুই দিতি নতুনের ছোয়া । সেই ছোট্ট বেলায় মা মারা গেলেন;
বোধহয় জানতেন তিনি, এঘর দিব্যি টিকে যাবে
তাকে ছাড়াও, তোরই জন্যে। তাই তার নিশ্চিন্ত স্বর্গযাত্রা !
মাঝরাতে পড়ার ফাকে চা চেয়ে বারবার,
অনেক জ্বালিয়েছি তোকে । মাঝে মাঝে চুরি করে টাকা নিতাম
তোর পার্টস থেকে । টের পেয়েও কোনদিন বলিসনি কিছুই ।
আজো মনে পড়ে, সিগারেটে টান দিয়ে আমি বারান্দায়
উদাস দুপুর, তুই এসে হেসে বললি, বাবা যে ঘরে
সে খেয়াল আছে । আমি ভীষণ লজ্জায় ইতস্তত ;
ফেলে দে তাড়াতাড়ি, এটাও কি বলে দিতে হবে ??
বলে গেলি তুই, হুশ ফিরে পাওয়া আমার লাজুক হাসি ।
খুব মনে পড়ে আজ সেই দিনগুলোর কথা ।
ছোট্ট বোনরে আমার, এত মমতা কেন দিয়েছিলি তুই ?
কেন আমায় ফেলে গেলি একা করে ?
আজ দুটো বছর ঘরে যাইনা আমি । কেন যাব আমি ?
ঘরে গেলেই শুধু মনে হয় তোর কথা । মনে হয়
তুই আর নেই । জানি হাত বাড়ালেই আর পাব না তোকে
আমি পারব না তোকে লালশাড়ি কিনে দিতে । আর কেউ তুলে রাখা
মাছের টুকরো দেবে না আমার পাতে । আর কোনদিন
অশ্রুভেজা চোখে কেউ আসবে না আমার বুকে ।
আর কোনদিন ভালবাসতে পারব না তোকে
আমার মতন করে । বিষন্ন সন্ধ্যায়, ক্লান্ত দুপুরে
বিরহ বেদনায় আমার কেউ দেবেনা সান্তনা, কারো আচলে
আমার হবে না ঠাঁই, সন্তানরূপী ভাই হয়ে ।
তারিখ : ৫/৪/২০১১
আপনারা সবাই জানেন, প্রিয় ব্লগার নষ্টছেলে ভাইয়া একটা ব্লগ লিখেছিলেন, মাস তিনেক আগে
জানি হাত বাড়ালেই পাবো না এই নামে । তো লেখাটা পড়ার পর আমার মনে হয়েছে, লেখাটি কবিতা হয়ে ওঠার অপেক্ষায় আছে । তো আমি নষ্ট ভাইয়াকে বললাম আমি কবিতাটি লিখতে চাই । উনি আমাকে অনুমতি দিলেন । তাই এই কবিতাটি লেখা ।
কবিতাটি একটি শোক কবিতা । উনার বড় বোন কিছুদিন আগে স্বর্গত হন । তো পিঠাপিঠি ভাইবোন ওনাদের অন্তরঙ্গতা আমি কবিতায় ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করেছি । তবে একটা কথা কবি হিসেবে আমি কিছু স্বাধীনতা নিয়েছি । আপুকে একানে ছোট হিসেবে দেখিয়েছি । আর বেশ কিছু বিষয়ে কল্পনার আশ্রয় নিয়েছি । আর সবশেষে নষ্ট ভাইয়াকে বলছি, আমরা কবিরা খুব খারাপ । অন্যের দু:খ নিজের লেখায় টানি, কিন্তু অনুভব করার চেষ্টা করি না । এখানে তাই হচ্ছিল, কিন্তু শেষমেষ স্রষ্টা আমায় দায়মুক্তি দেবার জন্যেই বোধহয় চোখে জল আনলেন । সবাই দোয়া করবেন আপু যেন জান্নাত বাসী হন । ভাল থাক ভাইয়া ।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০১১ বিকাল ৪:৫৬